ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বেপরোয়া

  • আপলোড সময় : ০৯-১১-২০২৪ ০৩:১৫:৫৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-১১-২০২৪ ০৩:১৫:৫৯ অপরাহ্ন
ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বেপরোয়া
* রাজধানীতে ৮ লাখ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক ঢুকে পড়েছে: ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন
* রাজধানীজুড়ে জনদুর্ভোগ, বাড়ছে তীব্র যানজট
* পুলিশের সামনেই অবাধে চলছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা
* ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক প্রসঙ্গে যা বলছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা


গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। মানছে না সড়ক আইনের কোনো নিয়ম-কানুন, তোয়াক্কাও করছে ট্রাফিকের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের। এ যেন মামুর বাড়ির আবদার। যে যেভাবে খুশি রাজধানীর রাজপথ ও অলিগলিতে দাপটের সঙ্গে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। সিগন্যাল না মেনে যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করার পাশাপাশি মহাসড়কও দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত এসব বাহন। এতে জনভোগান্তি যেমন বেড়েছে তেমনি নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। হঠাৎ করে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা ও বাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজট পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এসব রিকশার বেপরোয়া গতির কারণে যেমন হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি অবৈধ লাইনে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুতের। তবে তাদের কেউ কিছু বললেই মুহূর্তে জড়ো হচ্ছেন এরসঙ্গে জড়িত শতাধিক ডাইভার ও শ্রমিক। তবে নগরবাসিরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা আমাদের কাছে এখন বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীতে সীমিত সংখ্যক লাইন্সের বিপরীতে অনুমোদনহীন লক্ষ লক্ষ রিকশা চলছে এ নগরীতে। সম্প্রতি এর সাথে যোগ হয়েছে লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা। যানজটের তীব্রতা ও দুর্ঘটনা রোধে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধের নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।
সরেজমিনে সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, কলাবাগন, মিরপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, মহাখালী ও বাড্ডা এলাকাসহ প্রায় সব মূল সড়কে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক চলতে দেখা গেছে। এসব অটোরিকশা যখন-তখন দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে চলে আসছে, কোথাও হঠাৎ করেই বাঁক নিচ্ছে। এতে পেছনের যানবাহনের চালকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আবার দ্রুতগতিতে সড়কে উল্টোদিকে চলে অন্য যানবাহনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। কথা হয় মাসু নামে  একজন বাস চালক এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে রাস্তায় অন্য গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এগুলো কোনো ধরনের সিগন্যাল না মেনে উল্টো দিকে ছুটে চলে। এ কারণে গণপরিবহনসহ সব ধরনের গাড়ি চলতে বাধার সম্মুখীন হয়। তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশও এসব যানবাহন চলতে বাধা দিচ্ছে না। ব্যাটারিচালিত গাড়ির চালকরা এলোপাতাড়ি যাতায়াত করে। কোনো সিগন্যাল না মেনে ওভারটেক করে। আগে মেইন রোডে চলার কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে জরিমানা করা হতো, ডাম্পিং করা হতো। এসব রিকশায় দিকনির্দেশনা দেয়ার কোনো লাইট নাই। ধীরগতির কারণে পেছনের গাড়িরও গতি কমিয়ে দিতে হয়। এতে সড়কে যানজট তৈরি হয়। তবে ভিন্ন কথা বলছেন, একাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক। তারা জানান, আগে ট্রাফিক পুলিশ অনেক সমস্যা করতো, তাই মূল সড়কে উঠতো না। শুধু রাতে মূল সড়কগুলোতে চলাচল করতো তারা। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা পাল্টে গেছে। কারণ পুলিশ কিছু বলে না। আর এই সুযোগে তারা কাউকে তোয়াক্কা না করেই চলাচল করছে। মূল সড়কে নিয়ম না মেনে অন্যান্য গাড়ির সমানে যাচ্ছে এসব চালক। এতে করে যানজট হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তারা। তাদের দাবি, গলির সড়কের চেয়ে মূল সড়কে বেশি ইনকাম করা যায়। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থার সময়ে কিছুদিন ছাত্র-জনতা নিজেদের উদ্যোগে রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সে সময় অননুমোদিত এসব রিকশার মূল সড়কে চলাচল শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নামলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে অনেকটাই বাধাহীনভাবে। এতে অদক্ষ চালকের এলোমেলো চলাচল, আইন না মানার প্রবণতা, উল্টোপথে চলা, যেখানে-সেখানে হুটহাট রিকশা ঘোরানো- সব মিলিয়ে রাজধানীতে রাস্তায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। শুধুই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উড়াল সড়কেও উঠে যাচ্ছে ব্যাটারি চালিত এই তিন চাকার বাহন। মহাসড়ক কিংবা উড়াল সড়কে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইল, অবৈধ এ যানের পক্ষে সাফাই গাইলেন এর চালকরা।
পুলিশের সামনেই অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা: গত অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় যানজট পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশের চোখের সামনেই প্রধান সড়কে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। বরং অবাধে চলতে চলতে এগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিয়ম ও আইনের তোয়াক্কা না নিজের মতো মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব বাহন। কোনো সিগন্যাল না মেনে যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে এগুলো। এতে বাড়ছে জনভোগান্তি, সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের হিসেব মতে, স্বৈরাচারি হাসিনার পতনের পর শিথিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে কমপক্ষে ৮ লাখ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক ঢুকে পড়েছে রাজধানীতে। ঢাকার বাইরে থেকে এখনও সমানে ঢাকায় ঢুকছে। রাজধানীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইকের দাপট বেড়েছে। গণপরিবহনকেও ওভারটেক করতে পিছপা হয় না এসব বাহন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হলেও কোনোভাবেই এসব বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ কেন এসব নিষিদ্ধ যানের বিষয়ে নমনীয়তা দেখাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ডেমরা ও মিরপুরে বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা: রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী ও মিরপুর এলাকায় দেদারছে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। গলির ভেতরে এসব রিকশা চললেও সুযোগ বুঝেই গলি থেকে বের হয়ে মহাসড়কে উঠে যাচ্ছে। মো: সুমন মিয়া নামে এক কিশোর ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক যাত্রী ডাকাডাকি করছে। বয়স জানতে চাইলে ১২ নাকি ১৪, ঠিকঠাক বলতে পারে না। তবে রিকশা পার্কিং আর ডাকাডাকিতে অন্যান্য রিকশাচালকের চেয়ে কোনো অংশেই কম যায় না। সুমন জানান, রিকশাটি তার বাবার হলেও বেশিরভাগ সময় সে নিজেই চালায়। তার ডগাইর মুরগীর ফার্ম এলাকায় একটি প্যাডেলচালিত রিকশা গ্যারেজ আছে। সেখানেই পার্কিংয়ের পাশাপাশি রাতে ব্যাটারি চার্জ দেয়। এক রাতে দুটি ব্যাটারি চার্জ দিতে ১৫০ টাকা গুনতে হয়। একইভাবে আলামিন রোডের একটি গলিতে দুটি রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। মূলত প্যাডেলচালিত রিকশার গ্যারেজে লাইট জ্বালানোর জন্য বিদ্যুতের লাইন নিয়েছেন তারা। কিন্তু একই গ্যারেজে লাইটের লাইন থেকে বাড়তি লাইন নিয়ে চার্জ দেয়া হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। সম্প্রতি ডেমরা থানাধীন ডগাইর বাজার মাজার রোডে মাহবুবের গ্যারেজের রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেয়ার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে এরশাদ (২৭) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। গত ৮ জুন টঙ্গীতে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও অহরত ঘটছে দুঘটনা। সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরা বামৈল এলাকায় অটোরিকশার ধাক্কায় ইউসুফ (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্বজনেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাত দেড়টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে মৃতের মেয়ে নিপা আক্তার জানান, ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় একটি ফলের দোকানে কাজ করেন তার বাবা। রাতে কাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। পরে লোক মারফত খবর পান, তার বাবাকে একটি অটোরিকশা ধাক্কা দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান। তিনি আরও জানান, তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দক্ষিণ লক্ষ্মীপাশা গ্রামে। বর্তমানে ডেমরা বামৈল এলাকাতে থাকেন। ডেমরা-যাত্রাবাড়ির মতো রাজধানীর মিরপুরে স্থানীয় সড়কগুলোর পাশাপাশি মূল সড়কেও বেপরোয়াভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে মিরপুর-১২ নম্বরের প্রধান সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। কখনো অলিগলি বা শাখা সড়ক থেকে হুট করে উঠে আসছে মূল সড়কে। আবার নিয়মের তোয়াক্কা না করে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে রাস্তা। চলছে উল্টো পথেও। তবে শুধু মিরপুর নয়, রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকায় এখন অটোরিকশা চলাচলের এমন চিত্র নিত্যদিনের। তবে মূল সড়কে অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচলে বিপদে পড়ছে দ্রুতগতির যানবাহনগুলো। এতে প্রতিদিনই ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটছে। ট্রাফিক ও কমিউনিটি পুলিশের তৎপরতাও এসব অটোরিকশার খামখেয়ালিপনা থামাতে পারছে না মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনের নিচে কথা হয় শিমুল নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে হাঁটার মত অবস্থা নেই। ফুটপাতে হকার; সড়কে অটোরিকশা মৌমাছির চাকের মত ঘিরে ধরে। রাস্তা পারাপারে বেশ কষ্ট হয়। মিরপুর ১২ নম্বর ও পল্লবী স্টেশনের নিচেও দেখা যায় একই চিত্র। মিরপুর ১২ নম্বর মোড় থেকে শুরু হয়েছে তিনটি প্রধান সড়ক। যার একটি গেছে সুজাতনগর, একটি মিরপুর ডিওএইচএস আর অন্যটি সিরামিক হয়ে কালশীর দিকে। আবার একাধিক শাখা সড়ক মিশেছে এই সড়কগুলোতে। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও খাবারের দোকান থাকায় মিরপুর ১২ নম্বর মোড়ে বাস, প্যাডেলচালিত ও ব্যাটারিচালক অটোরিকশার ভিড় লেগেই থাকে সবসময়। কখনো কখনো লেগে যায় যানজট। কোনো পদচারী সেতু না থাকায় এই মোড়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা নওরিন আলম বলেন, সারাদিন অটোরিকশার জটলা লেগেই থাকে। রিকশা সরিয়ে বাসে উঠতে হয়, কিংবা মেট্রোতে যেতে হয়। সেখানকার বাস ও মোটরসাইকেল চালকেরা বলছেন, ধীরগতির এসব যানবাহনের কারণে মিরপুরের প্রধান সড়কটিতে হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে। মোটরসাইকেল চালক আরমান হক বলেন, সবসময় উল্টো পথে আসে রিকশাগুলো। কোনো প্রকার সতর্কতা ছাড়াই শাখা সড়ক থেকে উঠে যায় মূল সড়কে। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠাচ্ছে, নামাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই মোটরসাইকেলের সঙ্গে এসব রিকশার দুর্ঘটনা ঘটছে। মূল সড়ক থেকে ধীরগতির যান তুলে দেয়ার দাবি জানান তিনি। রুহুল আমিন নামের একজন রিকশাচালক বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাম কম, আয়ও ভালো। ঢাকায় এসেই অনেকে রিকশা চালানো শুরু করে দেয়। অনেকেই বেশি টাকার জন্য বেপরোয়াভাবে চালায়। তারাই দুর্ঘটনা ঘটায়। ট্রাফিক পুলিশ মূল সড়কে রিকশা ধরা শুরু করলে একজন চালক অন্যদের সতর্ক করে দেয়। ফলে এসব যান ঠেকানো যায় না।
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক প্রসঙ্গে যা বলছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা: পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করেছে। এসব চালকের কোনো ধরনের নিবন্ধন ও অভিজ্ঞতা নেই। এতে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলোকে বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের অনুমতি দেয়া হয়নি। অবৈধভাবে চলার কারণে সিগন্যাল ও নিয়মনীতি মানছে না। ট্রাফিক পুলিশের নিয়মনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা খুবই জরুরি। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা একবার যদি মূল সড়কে চলার স্থায়ীভাবে সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে পরে তাদের সরানো কষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, কোনো ধরণের স্পেসিফিকেশন ছাড়াই এ রিকশাগুলো বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে সড়কে বিভিন্ন সংস্করণের এ ধরনের রিকশা দেখা যাচ্ছে। কোনোটার পেট মোটা, কোনোটা লম্বা, কোনোটার উপরে দেখবেন ছাউনি দেয়া আছে। যেভাবে পারছে তারা এই রিকশাগুলো বানিয়ে ফেলছে। সমস্যা হচ্ছে আমার সড়কে যে প্রোডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতা থাকার প্রয়োজন সেটা নেই। যানজটের পাশাপাশি এগুলো আমাদের সড়ককে অনিরাপদ করে তুলেছে। ধীরে ধীরে ব্যাটারিচালিত বাহনের সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি চালকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় গেলে এই সমস্যা কিছুটা হ্রাস পাবে বলেও মনে করেন তিনি। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, ২০০৯ অনুযায়ী যে সকল যান থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কর আদায় করতে পারে বা নিবন্ধন দিতে পারে সেই তালিকায় নেই ব্যাটারিচালিত এই বাহন। ফলে একদিকে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। জনভোগান্তির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ব্যাটারি চালিত রিকশা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট সড়ক দুর্ঘটনার ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ ঘটে ব্যাটারিচালিত বাহনগুলোর মাধ্যমে। কোন সড়কে কি পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে সে বিষয়ে নীতিমালা এবং বাহনগুলোর নির্দিষ্ট কাঠামো না থাকায় সড়কগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন বলেন, ৮ লাখ ব্যাটারি রিকশাকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো জনবল ট্রাফিক পুলিশের নেই। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, একটা সিগনালে দুশ’ ব্যাটারি রিকশা থাকলে পুলিশ থাকে সর্বোচ্চ তিনজন। তারা কিভাবে এগুলোকে বাধা দিবে? তিনি বলেন, এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাতে গ্যারেজগুলোতে অভিযান চালিয়ে ট্রাক দিয়ে তুলে এনে সব ধ্বংস করতে করতে হবে। দুদিন এমন অভিযান চালালেই আর কেউ প্রধান সড়কে চলাচলের সাহস করবে না। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাজধানীর জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বাহনের জন্য নীতিমালা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকার মতো ছোট শহরের মূল সড়কে এসব বাহন চলার ফলে সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তবে যাত্রীদের ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকগুলোতে না ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাছাড়া এসব বাহন যেন মূল সড়কে উঠতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে যাত্রীরা যদি তাদের এড়িয়ে চলেন তাহলে কাজটি করতে সহজ হবে। এসব গাড়ির জন্যই দিন দিন যানজটের মাত্রা বেড়ে চলেছে। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ডাম্পিং ব্যবস্থা চালু রাখা হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স